Friday, 4 April 2014

DAS KEBIN- ANJAN DUTTA

সোমবারে আসে স্বর্ণালী আর সুমন্ত
মঙ্গলে মিতা আর মন্টু
বুধবারে আসে বৈশাখী আর বিপ্লব
বৃহস্পতিবারে শেলী আর সন্তু
শুক্কুরবারে আসে সীমা আর শান্তনু
শনিবারে সুধা-সুধন্য
রবিবার বিকেলটা সবাই জানে কার
রবিবার আমাদের জন্য
ফিরে ফিরে সাতদিন দাসবাবুর এ কেবিন
কত প্রেমালাপে যায় ভরে
জায়গা নেই যে কোন আমাদের অন্য
তিনশ বছরের শহরে, এই তিনশ বছরের শহরে
হাট-মাঠ সিনেমার হলটা
নেই যে কোন গলি-দলটা
একটু আপন করে বলবো কোথায় বল
মনের গোপন এই কথাটা
ময়দানে মীটিঙ্গে শোরগোল
গঙ্গার ঘাটে ভিখিরির দল
তাই ঘুরেফিরে দাসবাবুর এই কেবিনটা
রয়ে গেছে সবচেয়ে সস্তা
এক কাপ চায়ে কেটে যায় আধঘণ্টা
দুই কাঁপে পৌনে তিন
ফিশ-চপ নিলে পাক্কা চার ঘন্টা
ডিশকো-বিরাজী নিলে প্রায় সারাদিন
এইভাবে কেটে যায় কত কত সপ্তাহ
বয়স শুধুই যায় বেড়ে
ভবিষ্যৎটা সেই যেমনটি ছিল
রয়ে যায় নড়বরে
তবু ঘুরে সাতদিন দাসবাবুর এ কেবিন
কত প্রেমালাপে যায় ভরে
জায়গা নেই যে কোন আমাদের অন্য
তিনশ বছরের শহরে, এই তিনশ বছরের শহরে

মাঝে মাঝে মনে হয় ধুচ্ছাই
এইবার আমি ঠিক পালাবোই
তবু রবিবার এলে সেই ঘুরেফিরে
দাসবাবুর কেবিনটাতে চলে যাই
সেই টেবলে আঁকিবুঁকি কাটা
কাগজের ন্যাপকিনে কবিতাটা
পর্দাটা টেনে দিয়ে পৃথিবীর সব ঝঞ্ঝাট
আমি ভুলে যাই
তিনমাস হয়ে গেল, রঞ্জন রঞ্জনা
আসেনাতো আর ফিরে ফিরে
তার বদলে স্বার্ণালী আর সুমনতো
ফিরে ফিরে আসে সোমবারে
এখন সুরঞ্জনা শ্যামলের হাত ছেড়ে
শমিকের হাত ধরেছে
বিপ্লবদেরও নাকি শুনছি ইদানিং
কথাকাটি বাড়ছে, বাড়ছে
আমাদেরও ফিউচার খুবই অপরিষ্কার
ভরসা পাচ্ছিনা কোন
হাঁড়িমুখ করে বসে থাকে নীলা আজকাল
চাকরিটা পায়নি এখনো, চাকরিটা পায়নি এখনো

SHAMSON- ANJAN DUTTA

জ্বলছে নিভছে নিয়নের বিজ্ঞাপন
বৃষ্টিতে ভিজে গেছে রাস্তা
ভেজা ভেজা মন
লাস্ট ট্রাম ধরে ঘরে ফিরবে আবার স্যামসন
সাথে নিয়ে সঙ্গী শুধুই স্যাক্সফোন
পাঁচতারা হোটেলের বাজনাওয়ালা ফেরে ঘর
এঁদোগলি সিঁড়ি ভেঙে স্যাঁতস্যাঁতে ছাদের ওপর
সস্তা মদে গেছে বিছানাটা ভিজে
ধুয়েমুছে গেছে যৌবন
স্যামসন আর তার সঙ্গী স্যাক্সফোন
এইভাবে খুন হয়ে যায় কতকত স্যামসন
হোটেলের কোণে খুন হয় কতকত স্যামসন
গোগ্রাসে গিলে চলে শহরটা দেয় নাকো কান
এইভাবে খুন হয়ে যায় কত জীবনের গান
দি লায়লা এসেছিল জীবনে একবার
দুদিনের প্রেম গ্যাছে দুদিনেই ভেঙে চুরমার
বেছে নিয়ে চলে গ্যাছে অন্য আরেকজন
ফেলে রেখে স্যামসন আর তার স্যাক্সফোন
ক্রুশবিদ্ধ যিশু ক্যালেন্ডার থেকে কাঁদে
তারই মত স্যামসন আটকে পড়েছে এক ফাঁদে
সস্তাহীন বিসুর বাজিয়েই যেতে হবে এইভাবে যাবৎজীবন
হোটেলের কোণে আলো আধারি নির্বাসন
এইভাবে খুন হয়ে যায় কতকত স্যামসন
হোটেলের কোণে খুন হয় কতকত স্যামসন
গোগ্রাসে গিলে চলে শহরটা দেয় নাকো কান
এইভাবে খুন হয়ে যায় কত জীবনের গান

আসবেনা দি লায়লা কোনোদিন বাঁচাতে তাকে
এইভাবে পচেগলে পাঁচতারা নরকে
নিঃশেষ হয়ে যাবে একদিন দুজন
স্যামসন আর তার সঙ্গী স্যাক্সফোন
ফুসফুসে লুকোনো আছে কতকত গান
জানবেনা কেউ সেই স্যাক্সফোনের অভিমান
শুধু মাঝরাতের আকাশে চাঁদটা ঘুম ভেঙে উঠে
শুনবে স্যামসনের সেই স্যাক্সফোন
এইভাবে খুন হয়ে যায় কতকত স্যামসন
হোটেলের কোণে খুন হয় কতকত স্যামসন
গোগ্রাসে গিলে চলে শহরটা দেয় নাকো কান
এইভাবে খুন হয়ে যায় কত জীবনের গান

DUTO MANUSH-ANJAN DUTTA

দু’টো মানুষ
একসাথে কত পথ চলা
হাতে হাত রেখে কথা বলা
কেন সব করে অবহেলা
কেন শেষমেষে এসে বিদায়
ফুলদানি
আছড়ে ভেঙ্গে চুড়মার
ফুল জল সব একাকার
নেমে আসে অন্ধকার
জানলার বাইরে নেমে আসে রাত

দু’টো বালিশ
কত স্বপ্ন ভালোবাসা বোঝাই
দেখে যায় এই কুৎসিত লড়াই
আশা আকাঙ্ক্ষা সব পুড়ে ছাই
কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না

টেবিল ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে
ভাঙ্গাচোড়া মন দুটো গুমড়ে গুমড়ে মরে
দুজনেই বসে থাকে হাত ধরবে বলে
কেউ মুখ ফুটে কিছুই বলে না
ভগবান তাই নেমে আসে না

আসে সকাল
চোখ মুছে চিঠি লেখা
সুটকেস হাতে ট্যাক্সি ডাকা
ফিরে না তাকিয়ে দেখা
ইশ…এইভাবে কেউ চলে যায়
এইভাবে কেউ চলে যায়

SUNTE KI CHAO TUMI- ANJAN DUTTA


শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর
ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর
দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওয়ালাটা কে
তার খেলনা দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে
স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা
সেই অদ্ভুত ফাটা বাঁশ আর মাটির সুর টানা টানা
দু’দিনের সম্পদ দু’টাকার বাজনার বিষ্ময়
তারপর কখন হঠাৎ সুখের মানে পাল্টে যায়

তারপর টিফিনের পয়সা দিয়ে সিগারেট
কলেজ কেটে সিনেমা বান্ধবীর সাথে কাটলেট
আসে দশটা পাঁচটা সেই একরুটের বাসটা তারপর
সবার মতই পড়তে হয় যে কাগজের টোপর

এখন মাসের শেষে মাঝে মধ্যে কান্না পায়
মিনিবাসে দাড়িয়ে অফিস যাবার সময়
এখন বুঝেছি সেই অদ্ভুত সুরের কি মানে
ফিরে তো যাওয়া যায় না যে আর সেখানে

যেতে হবে যে তোমাকে আমাকে চলে
লুকোনো টেক্কা সংসারের এক্কা দোক্কা ফেলে
প্রথমে যাবে ঘর-দোর দোকানপাট তারপর হৃদয়
কিছুই হলো না বাজানো গেল না সময়

ইদানিং সে সুরটা শুনতে যে খুব ইচ্ছে হয়
কিন্তু সেই খেলনাওয়ালা আর আসেনা পাড়ায়
হয়তো কোন অন্য অলি-গলি ঘুরে
অন্য কোন কাউকে টানছে সেই অদ্ভুত সুরে
অন্য কোন কাউকে টানছে সেই অদ্ভুত সুরে

শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর
ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর
দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওয়ালাটা কে
তার খেলনা দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে

Jatiswer suman

অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোন দাবি দাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া
মুহুর্ত যায় জন্মের মতো অন্ধ জাতিস্বর
গত জন্মের ভুলে যাওয়া স্মৃতি বিস্মৃত অক্ষর
ছেড়া তালপাতা পুঁথির পাতায় নিশ্বাস ফেলে হাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া…।
কালকেউটের ফণায় নাচছে লখিন্দরের স্মৃতি
বেহুলা কখনো বিধবা হয় না এটা বাংলার রীতি
ভেসে যায় ভেলা এবেলা ওবেলা একি শব দেহ নিয়ে
আগেও মরছি আবার মরবো প্রেমের দিব্যি দিয়ে...।
জন্মেছি আমি আগেও অনেক মরেছি তোমারি কোলে
মুক্তি পাইনি শুধু তোমাকেই আবার দেখবো বলে
বারবার ফিরে এসেছি আমরা এই পৃথিবীর টানে
কখনো গাঙ্গর কখনো কোপাই কপোতাক্ষর গানে
গাঙ্গর হয়েছে কখনো কাবেরি কখনো বা মিসিসিপি
কখনো রাইন কখনো কঙ্গো নদীদের স্বরলিপি
স্বরলিপি আমি আগেও লিখিনি এখনো লিখিনা তাই
মুখে মুখে ফেরা মানুষের গানে মানুষের গানে শুধু তোমাকেই চাই...।
তোমাকে চেয়েছি ছিলাম যখন অনেক জন্ম আগে
তথাগততার নিঃসঙ্গতা দিলেন অস্তরাগে
তারি করুণায় ভিখারিনী তুমি হয়েছিলে একা একা
আমিও কাঙ্গাল হলাম আর এক কাঙ্গাল এর থেকে দেখা
নতজানু হয়েছিলাম তখন এখনো যেমন আছি
মাধুকরি হও নয়ন মোহীনি স্বপ্নের কাছাকাছি
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই
বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই….
আমার স্বপ্নে বিভোর হয়েই জন্মেছ বহুবার
আমিই ছিলাম তোমার কামনা বিদ্রোহ চিৎকার
দুঃখ পেয়েছ যতবার যেন আমায় পেয়েছ তুমি
আমিই তোমার পুরুষ আমিই তোমার জন্মভূমি
যতবার তুমি জননী হয়েছ ততবার আমি পিতা
কতো সন্তান জ্বালাল প্রেয়সী তোমার আমার চিতা
বার বার আসি আমরা দুজন বারবার ফিরে যায়
আবার আসবো আবার বলবো শুধু তোমাকেই চাই