Wednesday, 7 August 2013

Chithi


মনের মধ্যে জমে থাকা
রাশি রাশি অভিমানের ঝড়গুলো
জমেথাকা রাশি রাশি দুঃখ
রাশি রাশি আবেগ ভরা ক্ষতগুলোকে
শব্দ বাক্য করে ভোরে ফেললাম কাগজে ।
বড্ড ভারি হল কাগজটা
দেখিস ওতে দু ফোঁটা জল ও পাবি
একতা ভেজা সেতসেতে দুঃখও আছে ।
নাম ঠিকানা লেখার আর জায়গা হল না
তাও তর কাছে পাঠিয়ে দিলাম ।
আমার পোষা পায়রা নেই
যে পায়ে করে নিয়ে যাবে
পিওন গুলো ত মোটা কচ্ছপ
পৌঁছানর আগেই হয়ত মিলিয়ে যাবে
সময় সব কিছু মিলিয়ে দেয় ।
তাই মুখের বইয়ে পাঠালাম
ওরা জানে তুই কোন দ্বীপে থাকিস
জানি না তুই পাবি কিনা তবুও পাঠালাম
পড়িস কিন্তু , ভালথাকিস ।

পুরাতন ভৃত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূতের মতন চেহারা যেমন,   নির্বোধ অতি ঘোর— 
যা‐কিছু হারায়, গিন্নি বলেন,   “কেষ্টা বেটাই চোর।” 
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,   শুনেও শোনে না কানে। 
যত পায় বেত না পায় বেতন,   তবু না চেতন মানে। 
বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ   চীৎকার করি “কেষ্টা”— 
যত করি তাড়া নাহি পাই সাড়া,   খুঁজে ফিরি সারা দেশটা। 
তিনখানা দিলে একখানা রাখে,   বাকি কোথা নাহি জানে; 
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে   তিনখানা করে আনে। 
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে   নিদ্রাটি আছে সাধা; 
মহাকলরবে গালি দেই যবে   “পাজি হতভাগা গাধা”— 
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে,   দেখে জ্বলে যায় পিত্ত। 
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার— বড়ো পুরাতন ভৃত্য। 

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষমূর্তি   বলে, “আর পারি নাকো, 
রহিল তোমার এ ঘর‐দুয়ার,   কেষ্টারে লয়ে থাকো। 
না মানে শাসন   বসন বাসন   অশন আসন যত 
কোথায় কী গেল, শুধু টাকাগুলো   যেতেছে জলের মতো। 
গেলে সে বাজার সারা দিনে আর   দেখা পাওয়া তার ভার— 
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি   ভৃত্য মেলে না আর!” 
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,   আনি তার টিকি ধরে; 
বলি তারে, “পাজি, বেরো তুই আজই,   দূর করে দিনু তোরে।” 
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায়;   পরদিনে উঠে দেখি, 
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে   বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি— 
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোনো দুখ,   অতি অকাতর চিত্ত! 
ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে—  মোর পুরাতন ভৃত্য! 

সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা   করিয়া দালালগিরি। 
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন   বারেক আসিব ফিরি। 
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়,   বুঝায়ে বলিনু তারে— 
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য,   নহিলে খরচ বাড়ে। 
লয়ে রশারশি করি কষাকষি   পোঁটলাপুঁটলি বাঁধি 
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে   গৃহিণী কহিল কাঁদি, 
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে   কষ্ট অনেক পাবে।” 
আমি কহিলাম, “আরে রাম রাম!   নিবারণ সাথে যাবে।” 
রেলগাড়ি ধায়; হেরিলাম হায়   নামিয়া বর্ধমানে— 
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত,   তামাক সাজিয়া আনে! 
স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর    কত বা সহিব নিত্য! 
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি   হেরি পুরাতন ভৃত্য! 

নামিনু শ্রীধামে— দক্ষিণে বামে   পিছনে সমুখে যত 
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণটা   করিল কণ্ঠাগত। 
জন‐ছয়‐সাতে  মিলি এক‐সাথে   পরমবন্ধুভাবে 
করিলাম বাসা; মনে হল আশা,   আরামে দিবস যাবে। 
কোথা ব্রজবালা কোথা বনমালা,   কোথা বনমালী হরি! 
কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত!   আমি বসন্তে মরি। 
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো   বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ; 
আমি একা ঘরে ব্যাধি‐খরশরে   ভরিল সকল অঙ্গ। 
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ,   “কেষ্ট আয় রে কাছে। 
এত দিনে শেষে আসিয়া বিদেষে   প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।” 
হেরি তার মুখ ভরে ওঠে বুক,    সে যেন পরম বিত্ত— 
নিশিদিন ধরে দাঁড়ায়ে শিয়রে   মোর পুরতন ভৃত্য। 

মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল,   শিরে দেয় মোর হাত; 
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম,   মুখে নাই তার ভাত। 
বলে বার বার, “কর্তা, তোমার   কোনো ভয় নাই, শুন— 
যাবে দেশে ফিরে, মাঠাকুরানীরে   দেখিতে পাইবে পুন।” 
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম;   তাহারে ধরিল জ্বরে; 
নিল সে আমার কালব্যাধিভার   আপনার দেহ‐’পরে। 
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দু দিন,   বন্ধ হইল নাড়ী; 
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে,  এতদিনে গেল ছাড়ি। 
বহুদিন পরে আপনার ঘরে   ফিরিনু সারিয়া তীর্থ; 
আজ সাথে নেই চিরসাথি সেই   মোর পুরাতন ভৃত্য।

Mone kore jeno bidesh ghure


মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে
     মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে ।
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে,
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরে
     টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে ।
রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে
     রাঙা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে ।

     সন্ধে হল,সূর্য নামে পাটে
     এলেম যেন জোড়াদিঘির মাঠে ।
ধূ ধূ করে যে দিক পানে চাই
কোনোখানে জনমানব নাই,
তুমি যেন আপনমনে তাই
     ভয় পেয়েছ; ভাবছ, এলেম কোথা?
আমি বলছি, ‘ভয় পেয়ো না মা গো,
     ঐ দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা ।’

চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে,
    মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে ।
গোরু বাছুর নেইকো কোনোখানে,
সন্ধে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে,
আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে,
     অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো ।
তুমি যেন বললে আমায় ডেকে,
      ‘দিঘির ধারে ঐ যে কিসের আলো!’

     এমন সময় 'হারে রে রে রে রে’
     ঐ যে কারা আসতেছে ডাক ছেড়ে ।
তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে
ঠাকুর দেবতা স্মরণ করছ মনে,
বেয়ারাগুলো পাশের কাঁটাবনে
     পালকি ছেড়ে কাঁপছে থরোথরো।
আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে,
     ‘আমি আছি, ভয় কেন মা কর।’

হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল
     কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল ।
আমি বলি, ‘দাঁড়া, খবরদার!
এক পা আগে আসিস যদি আর -
এই চেয়ে দেখ আমার তলোয়ার,
     টুকরো করে দেব তোদের সেরে ।’
শুনে তারা লম্ফ দিয়ে উঠে
     চেঁচিয়ে উঠল, ‘হারে রে রে রে রে।’

     তুমি বললে, ‘যাস না খোকা ওরে’
     আমি বলি, ‘দেখো না চুপ করে।’
ছুটিয়ে ঘোড়া গেলেম তাদের মাঝে,
ঢাল তলোয়ার ঝন্‌ঝনিয়ে বাজে
কী ভয়ানক লড়াই হল মা যে,
     শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।
কত লোক যে পালিয়ে গেল ভয়ে,
     কত লোকের মাথা পড়ল কাটা।

এত লোকের সঙ্গে লড়াই করে
     ভাবছ খোকা গেলই বুঝি মরে।
আমি তখন রক্ত মেখে ঘেমে
বলছি এসে, ‘লড়াই গেছে থেমে’,
তুমি শুনে পালকি থেকে নেমে
     চুমো খেয়ে নিচ্ছ আমায় কোলে -
বলছ, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল!
     কী দুর্দশাই হত তা না হলে।’

     রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা -
     এমন কেন সত্যি হয় না আহা।
ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,
শুনত যারা অবাক হত সবে,
দাদা বলত, ‘কেমন করে হবে,
     খোকার গায়ে এত কি জোর আছে।’
পাড়ার লোকে বলত সবাই শুনে,
      ‘ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে।’

dui bighe jomi


শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, 'বুঝেছ উপেন? এ জমি লইব কিনে।'
কহিলাম আমি, 'তুমি ভূস্বামী, ভূমির অন্ত নাই -
চেয়ে দেখো মোর আছে বড়জোর মরিবার মতো ঠাঁই।
শুনি রাজা কহে, 'বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখানা,
পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা -
ওটা দিতে হবে।' কহিলাম তবে বক্ষে জুড়িয়া পাণি
সজল চক্ষে, 'করুন রক্ষে গরিবের ভিটেখানি।
সপ্তপুরুষ যেথায় মানুষ সে মাটি সোনার বাড়া,
দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে এমনি লক্ষ্মীছাড়া!'
আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল রহিল মৌনভাবে,
কহিলেন শেষে ক্রুর হাসি হেসে, 'আচ্ছা, সে দেখা যাবে।'

পরে মাস-দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে বাহির হইনু পথে -
করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি মিথ্যা দেনার খতে।
এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
মনে ভাবিলাম, মোরে ভগবান রাখিবে না মোহগর্তে,
তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে।
সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে হইয়া সাধুর শিষ্য -
কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য।
ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে যখন যেখানে ভ্রমি
তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে সেই দুই বিঘা জমি।
হাটে মাঠে বাটে এইমত কাটে বছর পনেরো-ষোলো,
একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে বড়োই বাসনা হল।।

নমোনমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!
গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।
অবারিত মাঠ, গগনললাট চুমে তব পদধুলি -
ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলাগেহ -
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল নিশীথশীতলস্নেহ।
বুক-ভরা-মধু বঙ্গের বধু জল লয়ে যায় ঘরে
মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে।
দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে প্রবেশিনু নিজগ্রামে -
কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি, রথতলা করি বামে,
রাখি হাটখোলা নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে আমার বাড়ির কাছে।।

ধিক্ ধিক্ ওরে, শত ধিক্ তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি,
যখনি যাহার তখনি তাহার - এই কি জননী তুমি!
সে কি মনে হবে একদিন যবে ছিলে দরিদ্রমাতা
আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফলফুল শাক-পাতা!
আজ কোন্ রীতে কারে ভুলাইতে ধরেছ বিলাসবেশ -
পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি গৃহহারা সুখহীন,
তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী, হাসিয়া কাটাস দিন!
ধনীর আদরে গরব না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন -
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সে দিনের কোনো চিহ্ন!
কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ী, ক্ষুধাহরা সুধারাশি।
যত হাসো আজ, যত করো সাজ, ছিলে দেবী - হলে দাসী।।

বিদীর্ণহিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া চারি দিকে চেয়ে দেখি -
প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে সেই আমগাছ একি!
বসি তার তলে নয়নের জলে শান্ত হইল ব্যথা,
একে একে মনে উদিল স্মরণে বালককালের কথা।
সেই মনে পড়ে, জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন -
ভাবিলাম হায়, আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন।
সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে,
দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল আমার কোলের কাছে।
ভাবিলাম মনে, বুঝি এতখনে আমারে চিনিল মাতা।
স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা।।

হেনকালে হায় যমদূতপ্রায় কোথা হতে এল মালী।
ঝুঁটিবাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে পাড়িতে লাগিল গালি।
কহিলাম তবে, 'আমি তো নীরবে দিয়েছি আমার সব -
দুটি ফল তার করি অধিকার, এত তারি কলরব।'
চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে কাঁধে তুলি লাঠিগাছ;
বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে ধরিতেছিলেন মাছ -
শুনে বিবরণ ক্রোধে তিনি কন, 'মারিয়া করিব খুন।'
বাবু যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ।
আমি কহিলাম, 'শুধু দুটি আম ভিখ মাগি মহাশয়!'
বাবু কহে হেসে, 'বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়!'
আমি শুনে হাসি, আঁখিজলে ভাসি, এই ছিল মোরে ঘটে -
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।।

এসে হীরকদেশে দেখে হীরের চমক


এসে হীরকদেশে
দেখে হীরের চমক,
এতো খাতির পেয়ে
দেখে রাজার ঝমক
মোদের মন ভরে গেছে খুশীতে…
মোরা সে কথা জানাই

রাজা এতোই রসিক
রাজা এতো দরাজ
রাজা এতো মিশুক
রাজার চিকন মেজাজ,
মোদের প্রান ভরে গেছে তাই…
মোরা সে কথা জানাই…….

বলো হীরক রাজার জয়,
বলো এমন রাজা ক’জন রাজা হয়
কতো দেশে দেশে, ঘুরে শেষে
মন বলে হীরকে এসে
‘এমন রাজা কোন দেশে নাই’
বলে ‘এমন রাজা কোন দেশে নাই’
মোরা সেই কথা জানাই
মোদের গানে, মোদের গানে সেই কথা জানাই…

থেমে যায় মেঘ


থেমে যায় মেঘ গাছে ফুলে ঘুমে চোখ
বুজে আসে তুমি চুপ
আমি জানি চুপিসারে আগুন
জ্বলে যায় ঘষা কাঁচ আর নখ
গ্রামাফোনে জালবোনে সময়
হিমঘরে সাদা চাদরে পরবাসে কে
ভেঙ্গে যায় বুকে চেনা চেনা সব মুখ
ভীরে মিসে যায় কুয়াশায়
শুধু ভাবি উলেবোনা জীবন
পরে যায় খালি বার সারাখন
পাইনবনে গাছগনে বাতাস
ভয়করে ঠাণ্ডা পাথরে ফেটে আসে সে
বুকের হাত পাথর ভেজা ফুলে
ছাই আতর বাতাসে দিন নিভে যায়
ইটের শিরায় পথ হারায় অর্কিডেমোরা ছাত
রাত কুড়ে খায় ঘুন পোকায় আমার বুকের ভিতর
জিম ধরে যায় হাওয়ায় ।  

নীল স্লিপিং পিলে রাত


চলে যাচ্ছে গতকাল ভাবে আনমনা রুমাল
যদি ঠাণ্ডা রঙমশাল জ্বলে যায়
চলে যাচ্ছে গতকাল ভাবে আনমনা রুমাল
যদি ঠাণ্ডা রঙমশাল জ্বলে যায়

নীল স্লিপিং পিলে রাত সুতে চাইছে না হঠাৎ
যদি মুঠোয় ধরা হাত চলে যায়

তুমি গুছিয়ে কোন কথা বলতে পারনা
তুমি গুছিয়ে ঠিক কথা বলতে পারনা
শুধু সময় নিজের গল্প বলে যায়

এই পাহাড়িয়া বাতাস তাদের টানে কোনদিকে
রোজ সন্ধে হলে পাখি গুলো যায়
তুমি বৃষ্টি দেখে ফিরছ কোন জাপসা তারিখে
এই কুয়াশা কে কাকে বোঝায়

নীল স্লিপিং পিলে রাত সুতে চাইছে না হঠাৎ
যদি মুঠোয় ধরা হাত চলে যায়

তুমি গুছিয়ে কোন কথা বলতে পারনা
তুমি গুছিয়ে ঠিক কথা বলতে পারনা
শুধু সময় নিজের গল্প বলে যায়

এই একা থাকার মরসুম এই শেষ না হওয়া রাত
কত কথা মনে পরছে কতবার
সব ছেড়ে যাবার রাস্তা ঘিরে হাল্কা তুষারপাত
শুধু ঘরে ফেরা হলনা তোমার

নীল স্লিপিং পিলে রাত সুতে চাইছে না হঠাৎ
যদি মুঠোয় ধরা হাত চলে যায়

তুমি গুছিয়ে কোন কথা বলতে পারনা
তুমি গুছিয়ে ঠিক কথা বলতে পারনা
শুধু সময় নিজের গল্প বলে যায়


Mondo Valoy Dishehara


মন্দ ভালোয় দিশেহারা
একরোখা দিন লাগামছাড়া রুটিন ছোটায়
রাস্তা ছোটে হাজার দিকে
শহরজোরা এই ট্রাফিকের ছুটি কোথায়...।

ছুটির কথাই উঠলো যখন
দিন কাটিয়ে সূর্য্যি তখন দিব্বি ডুরে
ভিড়ের ছোঁয়াচ লাগছে জামায়
রোদ্দুরে মন গল্প শোনায় এই দুপুরে

কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...
কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...
খেয়াল খুশির চলছে এ সময় ...।

বিকেল নামে পরের স্টপে
অল্প আলোয় কফিশপে আড্ডা ঘনায়
ফ্লাইওভার এর শরীর জুড়োয়
হাওয়া তখন কাগজ কুরায় অবুজপনায়...।

হাওয়ার কথাই উঠলো যখন
টিমটিমে নিল দিচ্ছে তখন সন্ধে জ্বালে
ঘরফেরা লোক ক্লান্তি কুঁড়োয়
ঝিমধরা চখ স্বপ্ন ওড়ায় কার্নিভ্যালে...।

কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...
কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...
খেয়াল খুশির চলছে এ সময় ...।

রাতের স্টপেজ নিওন ভেজা
বন্ধ বাজার ঘুম হেঁটে যায় রাস্তাদিয়ে
ফুটপাতও তার গল্প বলে
কেটলি ঘুমায় চায়ের স্টলে মুখলুকিয়ে ...।

ঘুমের কথাই উঠলো আবার
শহুরে রাত স্বপ্নে কাবার বাজবে অ্যালার্ম
অনেক দেখে একটু ভেবে
শহর আবার রওনা দেবে সকাল বেলা

কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...
কি জানি কখন কোথায় কিযে হয়...




MON - CHANDRABINDU


মন...
হাওয়ায় পেয়েছি তোর নাম
মন...
হাওয়ায় হারিয়ে ফেললাম..
হাওয়া দিলো শিশিরানিটা
হাওয়া দিলো ডানা
হাওয়া দিলো ছেঁড়া স্যান্ডল
ভুল ঠিকানা...
মন রে.....
হলুদ আলোয় হাওয়ার আবীর মাখলাম
হে হে মন...
আলেয়া পরালো খালি হাত
মন..
জাগেনা জাগেনা সারা রাত.....
জেগে থাকে ঘুম পাহাড়ের মন
কেমন আলো
দূরদেশে ফিকে হওয়া রাত
ডাক পাঠালো...
মন রে..
ঘুমের গোপনে তোমাকে আবার ডাকলাম
হে হে
আদরের ডাক যদি মুছে
এই নাও কিছু ঘুম পাড়ানি গান আলগোছে
বোঝনা এটুকু শিলালিপি
মন রে..
ব্যাথার আদরে অবুঝ আঙ্গুল রাখলাম
হে হে
মন...
বুকের ভিতরে যে নরম
মন...
ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না এরকম....
ছুঁয়ে দিলে বুক কুরে কুরে খায়
সোনা পোকা
বেপাড়ায় কাঁদবেনা এমা ছি: ছি: বোকা
মন রে...
নাহয় পকেটে খুচরো পাথর রাখলাম

MEGH PEON


মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

মন খারাপের খবর আসে বনপাহাড়ের দেশে ,
চৌকোণও সব বাক্সে যেথায় যেমন থাকসে
মন খারাপের খবর পরে দারুণ ভালোবেসে ।

মেঘের ব্যাগের ভিতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পারি
পাগদন্দি পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ি ,
বাগান শেষে সদর দোয়ার বারান্দাতে আরাম চেয়ার
গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি ,
সেথায় এসে মেঘ পিওনের সমস্ত ব্যাগ খালি  ।

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

দেয়াল জুরে ছোট্ট রোদের ছায়া বিশাল কায়
নিস্পলকে ব্যকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঠায়
কীসের অপেক্ষায় ।

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

আষাঢ় মেঘে বৃষ্টি এল আকাশ জুড়ে গাড়ও ,
রোদের সাথে ছায়ার আড়ি মুখ দেখেনা কারও ।

মেঘ করেছে পড়ার ঘরে বিছানাটা জুড়ে ,
উথাল পাথাল মেঘ করেছে নিজুম হৃদয়পুরে ।
.............................................।

রোদের ছুরি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত
রোদের বুকের ভিতর ক্ষত ।
সেই বুকের থেকে টুপ টুপ টুপ নীল কুয়াশা ঝরে ,
আর মন খারাপের খবর আসে আকাশে মেঘ করে
সারা আকাশ জুড়ে ।

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

মেঘের দেশে রোদের বাড়ি পাহাড় কিনারায় ,
যদি মেঘ পিওনের ডাকে সেই ছায়ার হদিশ থাকে
রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্খায় ।
কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ির বারান্দায় ।
ছোট্ট বাগানটায় ।

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

.............................................

বুঝি হটাত করে মেঘ পিওনের ক্ষণেক অসাবধানে ,
তার চিঠির গোছা উরে গেছে কখন দূরের বনে ।

গড়িয়ে গেছে ঝর্না জলে ছড়িয়ে গেছে গাছের ডালে ,
মন খারাপের পাতা গুলো গাছের পাতার মতো ,
নীল পাহারে পরছে ঝরে ঝরছে অবিরতও   ।

.............................................।

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা ,
মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা ।

মন খারাপের মেঘে গেল সারাটা বন ঢেকে ,
মেঘের ডাকে গুমরে ওঠা কষ্ট থেকে থেকে ।
ছায়া যেন ছায়ার মতো মেলায় পাহাড় বনে ,
ছায়াটি তার ফেলে গেছে কখন মনের কনে ।

.............................................।

এপাশ ওপাশ রাত্রি ফুরায় মন খারাপের ভোরে
পশলা মেঘে বৃষ্টি পরে বৃষ্টি পরে ঝরে ।
আয়ে বৃষ্টি টাপুর টুপুর আয়ে বৃষ্টি ঝেঁপে ,
মন খারাপের বৃষ্টি তোকে দুঃখ দেবো মেপে ।

.............................................।

মেঘ পিওনের কোথায় বাড়ি কোথায় সে কোন দূরে ,
আষাঢ় হলেই কোথা থেকে আসে আকাশ জুরে ।
মন খারাপের দিস্তেগুলি কখন বিলি করে ,
রাত জাগা কোন ভোরে মেঘের দ্বিপ্রহরে ।
বাগদন্দি পথের ধারে বাগান ঘেরা ঘরে  ,
এখন রোদ উঠেছে মেঘ পিওনের যাবার সময় প্রায় ,
যেসব চিঠি হয়নি বিলি পরেছে ঝরনায় ।

গড়িয়ে গেছে নদীর জলে ছড়িয়ে আছে গাছের ডালে ,
টুপ টুপ টুপ পরবে ঝরে পাহাড়তলির পথে ।
ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে শুকনো পাতার সাথে ।

মন খারাপের সজলটুকু শুকিয়ে গিয়ে শেষে ,
মিলিয়ে যাবে তিরতিরে এক মন কেমনের রেশে ।

মেঘ পিওনের ব্যাগের এবার মন কেমনের দিস্তা ,
সেই মন কেমনের মনের টানে চলছে বয়ে তিস্তা ।
চলছে বয়ে তিস্তা ।